উত্তরবঙ্গের বক্সা জয়ন্তীর পাহাড়ি বনাঞ্চলে নানা বিচিত্র ধরনের গাছ-গাছালি লতাগুল্ম অর্কিড প্রভৃতি দেখতে পাওয়া যায়। এগুলির মধ্যে একটি লতাকে বলে পানিলতা বা পানিলহরা (VITIS REPANDA)। এই লতা কাটলে কাটা অংশ দিয়ে বৃষ্টির মতো পরিষ্কার জল পড়তে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। এই জল সুপেয়। আগে এই পাহাড়ি বনাঞ্চলে যাতায়াতের সময় তৃষ্ণার্ত যাত্রীরা কাছাকাছি ভাল পানীয় জলের ঝরনা না পেলে এই লতার টুকরো কেটে তার মিষ্টি জলে তৃষ্ণা মেটাতেন। আর সে জন্যই এই লতা এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের কাছে পানিলতা বা পানিলহরা বলে পরিচিত।
এই লতাটি কাটলেও মরে যায় না। কাটা অংশটি থেকে আবার লতাটির শাখা বের হয়ে নতুন করে বাড়তে থাকে। এই লতাটি প্রথমে উপরের দিকে এবং তার পর নীচের দিকে কাটতে হয়। না হলে লতাটির কাটা অংশ থেকে খুব কম জল পাওয়া যায়। কারণ, নীচের দিকে আগে কাটলে লতাটি খুব তাড়াতাড়ি নীচের অংশের জল উপরের দিকে টেনে নেয়। ফলে তখন উপরের দিক থেকে কেটে টুকরো করলে সেই টুকরোর মধ্যে জল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কাটা টুকরোর জলের পরিমাণ টুকরোটির দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভরশীল। মিটারখানেক লম্বা বেশ মোটা একটা পানিলতা থেকে সাধারণ মাপের একটা গ্লাস ভর্তি জল সহজেই পাওয়া যায়।
এই লতা নানা ধরনের হয়ে থাকে। তবে সবগুলোরই বৈশিষ্ট্য লতাগুলি একটা বড় গাছ আশ্রয় করে উপরে উঠে যায়। নীচের দিকে এই লতার কোনও পাতা থাকে না। জড়িয়ে ধরা গাছের উপরে এর পাতা গাছের পাতার সঙ্গে এমন ভাবে মিশে থাকে যে বোঝা মুশকিল কোনটি এই লতার পাতা, আর কোনটি গাছটির আসল পাতা।
এই লতাগুলির সব জাতই ঠিকমত বাড়তে পারলে বেশ মোটা হয়। এর মধ্যে কতকগুলি বেশ মোটা বেতের মতো একটি গাছের কাণ্ড বরাবর সোজা উঠে গিয়ে উপর থেকে সেই গাছটিকে লম্বা লম্বা পাকে পেঁচিয়ে ধরে আরও উপরে উঠে যায় সূর্যের আলোর সন্ধানে। কতকগুলো আবার উঁচু গাছের ডাল থেকে মোটা দোলনার দড়ির মতো একটা অংশ নামিয়ে দিয়ে আবার উঠে যায় উপরে; একটা বেশ বড় সুন্দর মোটা লতার দোলনা তৈরি করে।
কতকগুলো আবার একটার সঙ্গে আর একটা জড়াজড়ি করে পাকানো মোটা দড়ির মতো গাছ বেয়ে উপরে উঠে যায়। আবার কতকগুলো একে বারে সাপের মতো এঁকে বেঁকে গাছ বেয়ে উপরে ওঠে। অনেক দরবেশের বা ফকিরের হাতে এই জাতীয় লতার লাঠিও দেখা যায়। আবার কতকগুলো আশ্রয় গাছটিকে এমন আঁকাবাঁকা ধরে থাকে যে মনে হয় প্রকৃতি বুঝি সেই বিশাল গাছটিতে উঠবার জন্য শক্ত গাছের ডালের বা লতার সিঁড়ি করে রেখেছে।