বাংলা সাহিত্বে এক বিশাল অংশ জুরে রয়েছে বাংলার লোকসাহিত্ব ও লোকায়ত গানগুলী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো যে এগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কালের গর্ভে। আমি তাই চেস্টা করেছি বাংলার এসব হারিয়ে যেতে বসা লোকসাহিত্ব্য ও লোকগিতীগুলো সংগ্রহ করে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার। সেই ধারাবাহিকতায় আজ থাকবে তার চতুত্থ পর্ব।
১.
উনুর ঝুনুর বাজে নাও আমার,
নিহাইল্যা বাতাসে রে।
মুর্শিদ রইলাম তোর আশে।।
উত্তরে সাজিল ম্যাঘ রে, দেওয়ায় দিল রে ডাক।
ছুটিল হস্তের বৌঠা, নৌকায় খাইল পাক রে।।
মুর্শিদ রইলাম তোর আশে।।
আগা দিয়া ওঠে ঢেউ রে পাছা দিয়া যায়।
কত হিরামন জহুরীর ভরা, দইরায় ভেসে যায় রে।।
মুর্শিদ রইলাম তোর আশে।।
একে ত নিহাইলেরে বাওরে, পালে দিলরে টান।
গলুইয়া কাঁদিয়া বলে হারইলাম পরাণ।।
মুর্শিদ রইলাম তোর আশে।।
(মুর্শিদি গান, ফরিদপুর)
২.
প্রেমের সন্ধি আছে তিন।
সরল প্রেমিক বিনে জানা হয় কঠিন।।
প্রেম প্রেম বললি কিবা হয়,
না জানলে সে প্রেম পরিচয়;
আগে সন্ধি করতে প্রেম মজ রে
আছে সন্ধিস্থানে মানুষ অচিন।।
পঙ্ক জল পল সিন্ধু বিন্দু,
আদ্য মূল তার শুষ্ক সিন্ধু;
ও তার সিন্ধু মাঝে আলেক পেচবে
উদয় হচ্ছে রাত্রিদিন।।
সরল প্রেমিক হইলে
চাঁদ ধরা যায় সন্ধিমূলে;
অধীন লালন ফকির পায় না ফিকির
হয়ে সদাই ভজন-বিহীন।।
(লালন শাহ)
৩.
ওকি বাওই রে,
ওরে ঝাকে উড়াই ঝাকে পড়ে রে।।
বাওই তাকসেন বলো রে পাকী,
একা হয়া দালে পড়ো
সেই না দুক্কে মরি হে বাওই, সেই না দুক্কে মরি।।
ওকি বাওইরে,
ওরে গুয়া খায়া পিক ঢালিচো রে বাওই,
ঠোট বা করিচো আংগা,
ঠোটের ওপর মানিক অতন, বাওই তিল্ফোটা।
ওকি বাওইরে,
নলের আগে নলখাগেড়া রে বাওই,
বাঁশের আগায় রে টিয়া,
সইত্য করি কও কতা বাওই, কইরচো নাহিন বিয়া রে।।
(কামরূপী ভাওয়াইয়া)
৪.
ও ভাই কানাই রে, নিদয়া ক্যানে হলি রে।।
কোথায় রহিলি রে ভাই, কোথাই তোরে পাই।
ভাই বলে ডাকপো কারে, আর তো লক্ষ্য নাই।।
ও ভাই কানাই রে, নিদয়া ক্যানে হলি রে।।
রাখাল গুণতে গিয়ারে কানাই, কোথায় যাইয়্যা রলি।
কি বইলে কালিদয়ে ঝাঁপ দিয়া প্রাণ হারইলি রে।।
ও ভাই কানাই রে, নিদয়া ক্যানে হলি রে।।
এই না কথা নন্দরাণী যখন শুনিবে,
প্রাণ গোপাল বইলে মায়ের প্রাণ বাহির হইয়্যা যাবে রে।।
ও ভাই কানাই রে, নিদয়া ক্যানে হলি রে।।
(সারি গান, ঢাকা)
৫.
ও আমার আন্ধার ঘরে বত্তি জ্বলে না, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার কপালের উপরে কপাল তুমি দিও না, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার কপালে আছে মানান টাইরাখানা, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার ছিঁড়ে যাবে কপালের টাইরাখানা, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার বদ্দোমানের গড়ানি আর টাইরা হবে না, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার হাতের উপর হাত তুমি দিও না, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার হাতে আছে সোনা গড়া বালাখানা, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার বেঁকে যাবে সোনাগড়া বালাখানা, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার বোলপুরের গড়ানি আর বালা হবে না, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার পায়ের উপর পা তুমি রেখো না, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার পায়ে আছে চাঁদির তোড়াখানা, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার ভেঙ্গে যাবে তোড়ার নক্সাখানা, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার কলকাতার গড়ানি আর তোড়া আর হবে না, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার কোমরের উপরে কোমর তুমি দিও না, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার কোমরে আছে গোটবিছাখানা, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার ছিড়ে যাবে বিছার টানাখানা, ওরে আমার কেলেসোনা
ও আমার বুম্বায়ের গড়ানি আর বিছা হবে না, ওরে আমার কেলেসোনা
(মুসলিম বিয়ের গান, বর্ধমান জেলা)
৬.
অধীন পাগল কানাই কয়,
চইড়া পোড়া প্রেমের নায়,
রাত্রদিন বৈসা ভাবি হায়রে হায়।।
ডুব ডুব ডুব সাধের তরী,
কখন যেন ডুবিয়া মরি,
কখন যেন হ্যাঁচকা টানে আমার প্রাণ যায়।।
একে তো মোর জীর্ণ তরী,
পাপের বোঝায় হইছে ভারি;
কেমনে যে দিব পাড়ি, আমার পারের সম্বল নাই।
এই ভাঙা নৌকা বাইতে বাইতে আমার দিন যায়।।
শোন ওরে মন-বেপারি,
এ ভব-নদী দিবি পাড়ি;
শ্রীগুরু যার আছে কান্ডারী, তার পারের ভয় নাই।
অনায়াসে সে পাড়ি দিয়ে পারে চলে যায়।।
(বাউল গান)